IQNA

বিশ্বনবীর (সা) সব যুদ্ধই ছিল আত্মরক্ষা ও প্রতিরক্ষামূলক

23:49 - May 22, 2017
সংবাদ: 2603127
ষষ্ঠ হিজরির ১৯ শাবান জেদ্দাহ ও রাবিগ্ব অঞ্চলের মধ্যবর্তী মুরাইসি নামক এলাকায় ঘটেছিল বনি-মুস্তালিক যুদ্ধ। ১৪৩২ বছর আগে সংঘটিত এ যুদ্ধে বিজয়ী হয় মুসলমানরা।

বার্তা সংস্থা ইকনা: বনি মুস্তালিক গোত্রের প্রধান হারিস ইবনে আবি দিরারের নেতৃত্বে মুশরিকরা মুসলমানদের ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে মর্মে খবর পাওয়ার পর বিশ্বনবী (সা) শান্তিপূর্ণ উপায়ে ব্যাপারটি মীমাংসার পদক্ষেপ নেন। কিন্তু মুশরিকরা শত্রুতা বন্ধ করতে ও ইসলামের আহ্বান মেনে নিতে অস্বীকার করায় অভিযান চালানো ছাড়া মুসলমানদের জন্য অন্য কোনও পথ খোলা থাকেনি।

মুসলমানদের তৎকালীন সামরিক অবস্থান: ষষ্ঠ হিজরিতে মুসলমানদের সামরিক শক্তি এতটা বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, তাদের বিশেষ অংশও মক্কার কাছে মহড়া দিয়ে ফিরে এসেছিল, কেউ তাদের কিছু বলার সাহস পায় নি। অবশ্য মদীনার আশে-পাশের অঞ্চলের অধিবাসীদের ওপর আধিপত্য বিস্তার ও তাদের সম্পদ হস্তগত করার লক্ষ্যে মুসলমানরা এই সামরিক শক্তি অর্জন করেনি।

মুশরিকরা মুসলমানদের স্বাধীনতা হরণ না করলে এবং ইসলামের প্রচার কাজে বাধা না দিলে কখনোই মহানবী (সা.) অস্ত্র কিনতেন না ও সেনা পাঠাতেন না। আসলে মুসলমানরা ও তাদের ধর্ম প্রচারক দলের সদস্যরা সব সময়ই শত্রুদের পক্ষ থেকে হুমকির মুখে ছিলেন বলেই ইসলামের মহান নবী (সা) বুদ্ধিবৃত্তিক কারণেই অর্থাৎ আত্মরক্ষার স্বার্থেই মুসলমানদের প্রতিরক্ষা শক্তিকে সুসংহত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

কেবল ষষ্ঠ হিজরি পর্যন্তই নয়, রাসূলের শেষ জীবন পর্যন্ত সংঘটিত সব যুদ্ধই নিম্নলিখিত যে কোন এক কারণে ঘটেছে :

১. মুশরিকদের কাপুরুষোচিত আক্রমণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে। যেমন : বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ।

২. মুসলমানদের এবং ইসলামের প্রচারক দলের সদস্যদের ওপর নির্যাতন বা তাঁদের হত্যাকারী বিভিন্ন গোষ্ঠী, বা মুসলমানদের সাথে চুক্তি ভঙ্গের মাধ্যমে ইসলামকে যারা হুমকির মুখে ফেলেছে, এমন গোত্রগুলোকে দমন করার জন্য। ইহুদীদের তিনটি গোত্র (বনী কাইনুকাহ্,বনী নাযির ও বনী কুরাইযাহ্) এরূপ চুক্তি ভঙ্গকারী বিশ্বাসঘাতক ছিল, যাদের সাথে মুসলমানরা যুদ্ধ করেছিলেন।

৩. ঐসব গোত্র ও দলের বিরুদ্ধে, যারা অস্ত্র ও সেনা সংগ্রহের চেষ্টা করত এবং এ প্রস্তুতির মাধ্যমে মদীনায় হামলার পাঁয়তারা করছিল। ছোট-খাটো যুদ্ধগুলো এ লক্ষ্যেই ঘটেছিল।

বনী মুস্তালিকের যুদ্ধ

বনী মুস্তালিক খুযাআ গোত্রের একটি উপগোত্র ছিল। তারা ছিল কুরাইশদের প্রতিবেশী। মদীনায় সংবাদ পৌঁছল, বনী মুস্তালিকের নেতা হারিস ইবনে আবি জারার মদীনা অবরোধ করার লক্ষ্যে অস্ত্র ও সৈন্য সংগ্রহের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। মহানবী (সা.) সাথে সাথে এ ফিতনার বীজ ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এ উদ্দেশ্যে প্রথমে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাহাবী বুরাইদাকে ঐ এলাকায় পাঠালেন। বুরাইদা আগন্তুক হিসেবে ঐ গোত্রপ্রধানের (হারিস) সঙ্গে দেখা করে কৌশলে তথ্য জেনে নিলেন। এরপর দ্রুত মদীনায় ফিরে এসে প্রতিবেদন পেশ করলেন। মহানবী (সা.) সঙ্গীদের নিয়ে বনী মুস্তালিক গোত্র অভিমুখে যাত্রা করে‘ মুরাইসাহ্’ নামক কূপের কাছে পৌঁছলে দু’ দলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।

মুসলিম বাহিনীর সেনা সংখ্যা ছিল খুবই কম। তাদের মধ্যে অশ্বারোহী ছিল মাত্র ত্রিশ জন। মুসলিম বাহিনীতে মিশে থাকা মুনাফিকরা প্রথমেই পালিয়ে যায় যখন তারা জানতে পারে যে বেশিরভাগ আরব গোত্রই মুশরিক যুদ্ধবাজ নেতা হারিসের মিত্র।

এ অবস্থায় খাঁটি মুসলমানরা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তাদের নেতৃত্ব দেন হযরত আলী (আ)। তিনি ‘মালিক’সহ বেশ কয়েকজন মুশরিক নেতাকে জাহান্নামে পাঠান (হত্যা করেন)।

মুসলিম যোদ্ধাদের আত্মত্যাগী ভূমিকা এবং তাঁদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও দুর্ধর্ষ আক্রমণের যে ভীতি কাফেরদের মধ্যে ছিল, তাতে তারা সহজেই ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। ক্ষণস্থায়ী এ যুদ্ধে দশজন কাফের সেনা নিহত হয় এবং ভুলবশত একজন মুসলিম সেনাও প্রাণ হারান। এ যুদ্ধের ফলে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ মুসলমানদের হস্তগত হয়। কোনও কোনও বর্ণনা অনুযায়ী মহানবী (সা)’র দাদা আবদুল মুত্তালিব (আ)’র কয়েকজন বংশধর এ যুদ্ধে শহীদ হন। মুশরিক নেতা হারিসসহ কয়েক’শ মুশরিক এ যুদ্ধে বন্দী হয়। হারিসসহ তার গোত্রের অনেকেই পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।

এ যুদ্ধের সময়ই নাজিল হয়েছিল সুরা ‘মুনাফিক’। এ সুরায় সাহাবির বেশধারী বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্র ফাঁস করা হয়। কারণ আবদুল্লাহ ইবনে উবাইসহ অনেক মুনাফিক ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র করছিল।

(সূত্র: আইআরবি এবং ‘চিরভাস্বর মহানবী-সা, দ্বিতীয় খণ্ড, ষষ্ঠ হিজরির ঘটনাপ্রবাহ)
captcha