IQNA

কেরালার বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হিজাবি মাজিজিয়ার সাফল্যের গল্প + ছবি

17:26 - July 22, 2018
সংবাদ: 2606272
‘আমি একজন সাধারণ মুসলিম নারী। হিজাব আমার প্রতিদিনের সাজসজ্জা্র অংশ। হিজাব পরে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া আমার জন্য কঠিন কিছু নয়। এখনো পর্যন্ত কোনো স্পোর্টস এসোশিয়েশন আমাকে হিজাব পরতে নিষেধ করেনি।’

কেরালার বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হিজাবি মাজিজিয়ার সাফল্যের গল্প 
বার্তা সংস্থা ইকনা: বলছিলেন ভারতে কেরালার কোঝিকোড জেলার অর্কাতেরি গ্রামের বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ক্রীড়াবিদ মাজিজিয়া ভানু (২৪)।

তিনি ইতোমধ্যে তিনটি বড় প্রতিযোগিতা থেকে পদক জিতেছেন। এগুলো হলো- আর্ম রেসলিং, বডি বিল্ডিং এবং পাওয়ার লিফটিং।

ভানু মাহী ডেন্টাল সায়েন্সেস ইন্সটিটিউটের ডেন্টাল সার্জারি চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। তিনি এখন বিশ্ব আর্ম রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী ১৩ থেকে ২১ অক্টোবর তুরস্কের আন্টালেয়ায় এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

চলতি বছরের মে মাসে লখনৌতে অনুষ্ঠিত জাতীয় আর্ম রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে তার আত্মপ্রকাশে তিনি চমত্কার ক্রিড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। প্রতিযোগিতায় হিজাব পরে অংশ নিয়ে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৫৫ কেজি ওজন শ্রেণিতে পরাজিত করে স্বর্ণ পদক লাভ করেন এবং ওয়ার্ল্ডস কাপে অংশ নেয়ার টিকেট অর্জন করেন।

অনেকেই জানেন না যে তিনি ওই চ্যাম্পিয়নশিপের মাত্র এক মাস আগে আর্ম রেসলিং অনুশীলন শুরু করেন।

ভানু বলেন, ‘চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কোঝিকোড জেলা চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে গিয়ে আমি প্রথমবারের মতো আর্ম রেস্টলিং টেবিল খুঁজে পাই।’

জেলা চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর তিনি রাজ্য পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন। এই পর্যায়ে তিনি আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন প্রাভিনাকে পরাজিত করে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন। এরপর বাকিটা হচ্ছে ইতিহাস।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভানু কেরালার শ্রেষ্ঠ নারী বডি-বিল্ডারের মুকুট জয় করেন। মাথায় হিজাব এবং পুরো শরীরে কালো আবায়া পরে তিনি কোচিতে রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে চারটি বাধ্যতামূলক অঙ্গবিন্যাসের মাধ্যমে তার শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন। এটি তাকে ‘কেরালার শক্তিশালী হিজাবী নারী’র খেতাব এনে দেয়।

মজিজিয়া ‘ভানু বলেন, ‘আমাকে পুরো শরীর ঢেকে এবং মাথার হিজাব পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেয়া হবে-অনুষ্ঠানের আয়োজকদের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পাওয়ার পরই আমি এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি এটির (বডি বিল্ডিং) জন্য প্রশিক্ষিত নই, কিন্তু আমি আমার যোগ্যতা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। প্রতিযোগিতার কয়েক ঘণ্টা আগে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমার কোচ আমাকে কিছু শারীরিক বিল্ডিংয়ের ছবি পাঠিয়েছিল। এটা আমাকে এই খেতাব অর্জনে সাহায্য করেছে।’

যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবের কারণে তিনি কানাডায় ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক পাওয়ার লিফটিং’ চ্যাম্পিয়নশিপ মিস করেন।

তিনি বলেন, ‘আমার যথাযথ প্রশিক্ষণ সুবিধা বা পুষ্টি বিশেষজ্ঞ এবং ফিজিওথেরাপিস্ট নেই। আশা করি এখন থেকে সবকিছুই বদলাবে।’

ভানু জানান, তার স্পোর্টিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে তার পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের সমর্থন ছাড়া আমি এই কৃতিত্বের স্বপ্ন দেখতে পারতাম না।’

তার বাবা আব্দুল মজিদ একটি কারাতে এক্সপোনেন্ট এবং তার মা রাজিয়া মাজিদ সবসময় তার উৎসাহের উৎস ছিল। তার ছোট ভাই মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন একজন উদ্দীপ্ত কোরিওগ্রাফার।

তার মা রাজিয়া বলেন, ‘আমি আমার কন্যার অর্জনের জন্য গর্বিত। ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে কোনো আপোষ না করেই তার এসব পদক জয় আমাদেরকে গর্বিত করেছে।’ স্ক্রল ডট ইন

captcha