বার্তা সংস্থা ইকনা: এর চাইতেও বেশি কঠিন কাজ হচ্ছে শত্রু ভাবাপন্ন চাচাতো ভাইদের দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি পরিবেশে নিজের স্বার্থকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য একজন নাতিকে বড় করে তোলা।
সৌদি আরবের উপর যেসব বিশ্লেষক সতর্ক দৃষ্টি রাখেন তারা সকলেই সেখানে বহু বছর ধরে ঠিক একই ধরনের সমস্যা দেখতে পেয়েছেন। সৌদি রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ বিন সৌদের ৪৫জন পুত্র বংশানুক্রমে এসকল সমস্যার মোকাবেলা করে রাজমুকুট একে অন্যকে দেয়ার রীতি প্রচলন রেখেছিলেন।
আর এখন সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে রাজমুকুটের জন্য সৌদি রাজ পরিবারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা আর ভবিষ্যতের কোনো বিষয় নয় বরং এটি এখন একটি বর্তমান সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
তবে এ কথা স্বীকার করতে হয় যে, তেলের সাগরে ভাসতে থাকা ভূখন্ডে পূর্বসূরি দাদা তার নাতিদের জন্য শতাব্দী কাল পূর্বে যে সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা মোটামুটি কম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
তবে সেখানে একটি বিষয়ের বড়ই অভাব রয়েছে আর তা হচ্ছে সৌদি রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা পূর্বসূরি দাদার মত ধূর্ততা এখনকার তৃতীয় প্রজন্মের মধ্যে একেবারেই নেই। আর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান নিজেকে সেরকমই একজন কম বুদ্ধিমান লোকে পরিণত করেছেন।
মোহাম্মদ বিন সালমান হচ্ছেন এমন এক ব্যক্তি যিনি তার বংশের মধ্যে অতি অল্প বয়সে মুকুট পরিধান করতে চলেছেন। তার পিতা কিং সালমানের বর্তমান বয়স ৮২ এবং আলজেইমার (Alzheimer) রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশিরভাগ সময় নিষ্ক্রিয় থাকেন।
এই তরুণ ধনকুবের সবকিছু অতি তাড়াতাড়ি করে নিতে চাইছেন, গত বছরে তিনি তার চাইতে বয়সে বড় একজন চাচাতো ভাইকে তার পথ থেকে সরিয়ে দিতে তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন, তার শত্রুদেরকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছেন এবং ইয়েমেন যুদ্ধ বাঁধিয়ে সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছেন।
তবে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তার চরিত্রের সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
একথা সত্যি যে, সৌদ রাজ পরিবারের প্রাসাদ কখনো স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে কাজ করে নি। তারা যেভাবে নিজ দেশে অত্যাচার চালিয়েছে ঠিক সেভাবেই দেশের বাহিরেও অত্যাচার চালিয়েছে।
আমি একজন বিজ্ঞ ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, মোহাম্মদ বিন সালমান পাগল নাকি মূর্খ? তিনি উত্তরে বলেছিলেন- ‘সে এর দুটোই।’
যুক্তিযুক্ত ভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ড. রুজভেল্টের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র হিসেবে ভূমিকা রেখে চলছে। সৌদ রাজতন্ত্র বর্তমানে ইরানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা মোকাবেলা করছে এবং একই সাথে ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করছে।
স্থিতিশীলতার মধ্যেই আমরা সৌদি রাজপরিবারের মধ্যকার বিভিন্ন শত্রুতা দেখেছি যা বৃদ্ধ কিং সালমান এবং তার ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজের মধ্যে চলমান ছিল। তীব্র শত্রুতার মধ্যেই এই দুই ব্যক্তিই সৌদি রাজপরিবারের প্রয়োগবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই মোহাম্মদ বিন সালমান তাদের পারিবারিক ব্যবসায় সবচেয়ে অযোগ্য লোক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে উচ্চ পর্যায়ে ক্রাউন প্রিন্স সালমানের বেশ কিছু মিত্র রয়েছে যারা অভিজ্ঞতাহীন ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে তার সম্পর্ককে উষ্ণ রাখতে সহায়তা করছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সৌদির সম্পর্ক কি ট্রাম্পের নিজস্ব আবাসন খাতে সৌদি বিনিয়োগের জন্যই? ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে ২০১৭ সালে সর্ব প্রথম সৌদি আরবের রিয়াদে সফর করার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বিশেষজ্ঞ এস. মুলার তেমনটিই মনে করেছেন।
এ পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাকভাবে চলে আসছে। সৌদি রাজতন্ত্র সেখানে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং নারীদের গাড়ি চালানো বৈধ ঘোষণা দিয়েছে। মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদির অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং প্রতিক্রিয়াশীল ইসলাম থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছেন।
এখন আমরা জানি মুখোশের আড়ালে কি রয়েছে।
সূত্রঃ ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত কলামিস্ট ডেভিড ভন দ্রেহলি এর কলাম থেকে।