IQNA

কাশ্মীর সংকট হিন্দু জাতীয়তাবাদের ফল

22:26 - August 08, 2019
সংবাদ: 2609048
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সাত দশক পর জম্মু–কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বা স্বায়ত্তশাসন বাতিল করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার এটাকে ‘ঐতিহাসিক ভুলকে’ সংশোধন হিসেবে বিশেষায়িত করেছে।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: বিরোধীপক্ষের দিক থেকে এই পদক্ষেপকে ভারতের অখণ্ডতা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কেন এটা ঘটল এবং এর গুরুত্বটাই বা কী? কাশ্মীর সংকটকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের ফল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশ্লষকেরা।

কাশ্মীর কেন বিরোধপূর্ণ

হিমালয় এলাকার একটি অঞ্চল কাশ্মীরের পুরোটাই নিজেদের দাবি করে আসছে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই। একসময় রাজার শাসন ছিল পৃথিবীর ভূস্বর্গখ্যাত জম্মু–কাশ্মীরে। ১৯৪৭ সালের ভারত উপমহাদেশ ভাগের পর এটি ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। অঞ্চলটি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। পরে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে অঞ্চলটি দুই ভাগে ভাগে করে নেয় দুটি দেশ। তবে ভারতের অংশে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।

কাশ্মীরে নতুন কিছু ঘটতে চলেছে, সেটার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল আগস্টের শুরু থেকেই। ১০ হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন, হিন্দু তীর্থযাত্রা বাতিল, বিদ্যালয় ও কলেজ বন্ধ, পর্যটকদের কাশ্মীরত্যাগ, টেলিফোন–ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, আঞ্চলিক নেতাদের গৃহবন্দী করার মতো ঘটনা ঘটে। তখনই জল্পনা–কল্পনা শুরু হয়, ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের ৩৫এ ধারায় কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা তাহলে কি রদ করতে যাচ্ছে ভারত? সেটাই দেখা গেল গত সোমবার। ওই দিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেটাই করল নরেন্দ্র মোদি সরকার। পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকলেও বিশেষ মর্যাদায় আলাদা পতাকা, আইন তৈরির স্বাধীনতার মতো বিষয়ে বিস্তর স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয় রাজ্যটিকে। কিন্তু এখন সব ক্ষমতা কেন্দ্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। বলতে গেলে সব ক্ষমতাই হারিয়েছে কাশ্মীরিরা।

সরকার কেন করল

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তাঁর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি দীর্ঘদিন থেকেই ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিরোধিতা করে আসছিল। ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে এই অনুচ্ছেদ রদ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তাদের দাবি, কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে পুরোপুরি একীভূত করতে অনুচ্ছেদটি বিলুপ্তি করা জরুরি। অনুচ্ছেদ বাতিলের সঙ্গে ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার যোগসূত্র দেখছেন সমালোচকেরা। তাঁরা বলেছেন, সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় বহুমুখী অর্থনীতির সুযোগ সৃষ্টিতে এটা সহায়তা করবে। অনেক কাশ্মীরি বিশ্বাস করেন, অন্য অঞ্চলের লোকদের কাশ্মীরে আসা ও জমি কিনে বসবাসের সুযোগের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনসংখ্যাগত চিত্র পরিবর্তন করতে চায় বিজেপি। তবে বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা পি চিদাম্বরম বলেছেন, সরকারের এই পদক্ষেপ ভারতের খণ্ডতার জন্য হুমকি ও বিপর্যয়কর।

হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন?

৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের যুক্তি দিয়ে সোমবার পার্লামেন্টে ভারতের অমিত শাহ বলেন, এই অনুচ্ছেদের কারণেই কাশ্মীরে গণতন্ত্র বাস্তবায়ন কখনো হয়নি। দুর্নীতি বেড়েছে। সেখানে কোনো উন্নতি হয়নি। সেখানে সন্ত্রাসবাদের আখড়া। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে এমনকি নারী–পুরুষ বৈষম্য চরমে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডার বিস্তার ঘটাতেই সরকারের এই পদক্ষেপ। লেখক ও মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মান্দার বলেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই সরকারের এই পদক্ষেপ। তিনি বলেন, কাশ্মীরের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য চাকরি, সম্পদের মালিকানাসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হতো। এখন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে বিভিন্ন জাতি–ধর্মের লোক যাবে। এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদের প্রভাবে রাশ টেনে হিন্দুত্বের বীজ বপন করা।

তবে সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ কাশ্মীরের জঙ্গিবাদকে উসকে দিতে সাহায্য করেছে এবং অধিক হারে মানুষ বিচ্ছিন্নতার পথ বেছে নেবে, বিশেষ করে যুবকেরা। হর্ষ মান্দার বলেন, ভারত সরকার কাশ্মীরে জনসংখ্যাগত ধরন পরিবর্তনের চেষ্টা করবে। নিজেদের ভূমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাবে। আর সেটা রুখতে দলে দলে যুবকেরা বিচ্ছিন্নতার পথে হাঁটবেন। ভবিষ্যতে সেখাকার নিরাপত্তা অবস্থা আরও জটিল রূপ ধারণ করবে।

captcha