IQNA

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সৌদি বিপ্লবী আলেম শেইখ নিমরের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী পালিত

23:50 - January 02, 2017
সংবাদ: 2602283
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রখ্যাত সৌদি আলেম শেইখ নিমর আল-নিমরের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানাবিধ অনুষ্ঠান মালার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে এই মহান শহিদের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী।
সৌদি বিপ্লবী আলেম শেইখ নিমরের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী

বার্তা সংস্থা ইকনা: এ উপলক্ষে ইরানের পবিত্র নগরী মাশহাদ ও কোমে আলোচনা সভা ও শোকানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের বক্তারা শেইখ নিমরের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সৌদি সরকারের সমালোচনা করেছেন।

এছাড়াও ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের দারুল হিকমা ইনস্টিটিউট, জার্মানি রাজধানী বার্লিন, ইরাকের পবিত্র নগরী কারবালা, বৈরুত, বাহরাইন, সৌদি আরবের (শেখ নিমরের জন্মস্থান) আল-আওয়ামিয়াহ এবং সেদেশের পূর্বাঞ্চলের এলাকাসমূহ সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই মহান নেতার শাহাদাত বার্ষিকী উদযাপন করেছে।

গত বছরের ২ জানুয়ারি সৌদি রাজতান্ত্রিক সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আহ্বানকে উপেক্ষা করে শেখ নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ শেখ নিমর আল-নিমরের নিমরের মৃত্যুদণ্ডের পর বলেছিল-সৌদি আরব শেইখ নিমরকে হত্যা করেছে।

হিজরি ১৩৭৯ সাল মোতাবেক ইংরেজি ১৯৫৯ অথবা ১৯৬০ সালে সৌদি আরবের তেলসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলের কাতিফের আওয়ামিয়াহ শহরে শেইখ নিমর বাকের আন-নিমর জন্মগ্রহণ করেন। সৌদি আরবে নিজ শহরে শিক্ষালাভের পর ধর্মীয় ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৮৯ সালে তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান আসেন। দীর্ঘ দশ বছর তিনি তেহরানের হজরত কয়েম (আ.) ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষালাভ করেন। একপর্যায়ে তিনি হজরত কয়েম (আ.) ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বও পালন করেন। এরপর শেইখ নিমর ইসলাম সম্পর্কে আরও বেশি গবেষণার জন্য সিরিয়ায় যান। সেখানে হজরত যেইনাব (সা.আ.) ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্রে ধর্ম সম্পর্কে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন ও গবেষণা করেন। তিনি মুজতাহিদ পর্যায়ে উন্নীত হন।

ইরান ও সিরিয়ায় উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করে নিজ শহরে ফিরে যান শেইখ নিমর। সেখানে তিনি ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। তরুণদের ধর্ম শিক্ষায় উজ্জীবিত করতে নানা উদ্যোগ নেন। তিনি আওয়ামিয়াহ শহরে ইসলামি কেন্দ্র আল-ইমামুল কয়েম (আ.)প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ নিমর আন-নিমর ছিলেন স্পষ্টবাদী।

নির্ভয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। মানুষের অধিকার রক্ষার কথা বলায় ২০১১ সালের আগেও তাঁকে দুই বার আটক করা হয়। সে সময় তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।

২০১১ সালে কাতিফে ইসলামি গণজাগরণ শুরু হয়। তাতে সমর্থন দেন শেইখ নিমর। এর পরের বছরই ২০১২ সালের ৮ জুলাই শেখ নিমর গ্রেপ্তার হন। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী।

এ সময় তার পায়ে চার বার গুলি করা হয়। গ্রেপ্তারের পর গুলিবিদ্ধ শেইখ নিমরকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া হয় নি। গ্রেপ্তারের পর কাতিফে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তাতে কয়েক জন নিহত হন।

মৃত্যুর সময় নিমরের বয়স ছিল পঞ্চাশের ঘরে। তিনি রাজতান্ত্রিক সরকারের নানা অপকর্মের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু কখনোই অস্ত্র হাতে নেওয়ার জন্য উসকানি দেন নি। সৌদি আরবের তরুণদের মধ্যে তার সমর্থন রয়েছে। সমর্থন রয়েছে বাহরাইনেও। ইরানের জনগণও শেইখ নিমরকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। ২০১৪ সালের অক্টোবরে সৌদি আরবের রাজকীয় আদালতের মাধ্যমে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

তার পরিবার জানিয়েছে, সৌদি আরবে বৈদেশিক অনধিকারচর্চাবাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রের অভিযোগেও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তার সমর্থকরা বলেছেন, শেইখ নিমর শুধু শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পক্ষেই ছিলেন। এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিবাদ পরিহার করেছিলেন।

২০১১ সালে গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শেইখ নিমর বলেছিলেন, তিনি অস্ত্রের চেয়ে জোরালো ভাষায় প্রতিবাদ করাকেই পছন্দ করেন। বুলেটের চেয়েও তা বেশি শক্তিশালী। কারণ অস্ত্র ব্যবহার করা হলে কর্তৃপক্ষই বেশি লাভবান হবে।

শেইখ নিমর বলতেন, "জুলুম জুলুমই। আপনি শিয়াই হন আর সুন্নিই হন, এ ক্ষেত্রে কোনো তফাৎ নেই। মজলুমদের সহযোগিতা করা আমাদের জন্য ওয়াজিব। শিয়া-সুন্নি বলে কোনো কথা নেই। জালেমদের সঙ্গে কোনো বন্ধুত্ব নেই। জালেমদের আমরা প্রতিহত করব। আল্লাহ জালেমদের ভালোবাসেন না। তাহলে আমরা কিভাবে ভালবাসবো? আমাদের পক্ষ থেকে মজলুমদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। জালেম শাসককে প্রতিহত করতে হবে।"

iqna

captcha