IQNA

ইতিহাসের এক নজিরবিহিন নারী ফাতেমা যাহরা (আ)

19:04 - March 21, 2017
সংবাদ: 2602753
নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) অতুলনীয় ও মহিমান্বিত ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন; যা মানবেতিহাসে অন্য কোন নারীর ভাগ্যে জুটেনি।

বার্তা সংস্থা ইকনা: মাসুম তথা পুত:পবিত্র ও ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে মহামানবগণ কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী; যে সব বৈশিষ্ট্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আর নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) অতুলনীয় ও মহিমান্বিত ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী; যা অন্য কোন মাসুম ব্যক্তিত্বের মধ্যেও নেই। তিনি তার মাত্র ১৮ বছর জীবনের প্রথম ৯ বছর ছিলেন নবুয়্যাত ও রেসালতের সেবায় নিয়োজিত এবং পরবর্তী ৯ বছর ইমামতের শিরোমণি আমিরুল মু'মিনিন আলীর (আ.) জীবনসঙ্গি জীবন অতিবাহিত করেছেন।

ইসলাম প্রচারের শুরুতে রাসূল (সা.) যখন মক্কার মুশরিকদের নিপীড়ন ও নির্যাতন সহ্য করে ঘরে ফিরে আসতেন, তখন শিশুকন্যা ফাতেমার (আ.) মমতার পরশ পেয়ে সব কষ্ট-দু:খ ভুলে যেতেন। আমিরুল মু'মিনিন আলীর (আ.) গৃহে যখন ছিলেন, তখন একজন প্রকৃত জীবনসঙ্গি হিসেবে ইমামের পাশে ছিলেন। তিনি আমিরুল মু'মিনিন আলীর (আ.) যাবতীয় কষ্ট-দু:খ, ব্যাথা-বেদনাকে ভাগাভাগি করে নিতেন। তাই তো ফাতেমা যাহরার (আ.) শাহাদতের পর তিনি বড় অসহায় হয়ে পড়েন। ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে যে, এ সময় ইমাম আলী (আ.) গভীর রাতে কুয়ার নিকট বসে বসে নিজের মনের দু:খের কথা প্রকাশ করতেন।

নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) মহিমান্বিত জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তিনি সমগ্র মানব জাতীর সর্বোত্তম আদর্শ। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল (সা.) যখনই স্বীয় কন্যা ফাতেমা যাহরাকে (আ.) দেখতেন, তখনই দাড়িয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন। আর নিজ কন্যা হওয়া সত্বেও ফাতেমার (আ.) প্রতি তার এমন নজিরবিহিন সম্মান এজন্য ছিল যে, যেহেতু ফাতেমা (আ.) আল্লাহর নিকট সুউচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। তিনি যখন কোন সফরে যেতেন তখন সর্বশেষ ফাতেমা যাহরার (সা.) সাক্ষাত করতেন এবং সফর থেকে ফিরে সর্বপ্রথম তার সাথেই দেখা করতেন। এমন আচরণ থেকে বুঝা যায় রাসূলের (সা.) নিকট ফাতেমার (আ.) অবস্থান কেমন ছিল।

মসজিদুন্নবীর (সা.) দেওয়ালের সাথে তখন যাদের গৃহের দরজা ছিল, আল্লাহর নির্দেশে সবার দরজা বন্ধ করা হয়। কিন্তু শুধুমাত্র আলী (আ.) ও ফাতেমা (আ.) ঘরের দরজা মসজিদের সাথে উন্মুক্ত ছিল। কেননা তাদের ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব অন্য সব সাহাবির থেকে অনেক বেশি। রাসূলের (সা.) ঘরের সাথে ফাতেমার (আ.) ঘরের মাত্র দূরত্ব ছিল একটি প্রাচীর; তাও সেখানে একটি জানালা ছিল। যে জানালা দিয়ে রাসূলের (সা.) মন যখনই ফাতেমার জন্য ব্যস্ত হত, তখনই নিজ কন্যার সাথে কথা বলতেন।

জান্নাতের সর্দার ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.) স্বীয় মাতা ফাতেমার (আ.) প্রতি অপরিসীম ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন; তাদের পর পরবর্তী ৯ জন মাসুম ইমামও খাতুনে জান্নাতের প্রতি নজিরবিহিন সম্মান জ্ঞাপন করেছেন। তারা সবাই ফাতেমাকে (আ.) স্বীয় মাতা এবং তাঁর সুমহান ফজিলতের সামনে সদা মাথানত করেছেন।

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে,

کانت فاطمة تنهج فی الصلاة من خیفة الله تعالی»

অর্থাৎ 'ফাতেমা যাহরা যখন নামাযের জন্য দাড়াতেন, তখন আল্লাহর ভয়ে মূর্ছা যেতেন।' ইমাম জাফর সাদীকের (আ.) নিকট জিজ্ঞাসা করা হয় যে, হে রাসূলের সন্তান! কেন ফাতেমা (আ.) 'যাহরা' নামে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। জবাবে তিন বলেছেন:  যাহরা অর্থ উদ্ভাসিত। ফাতেমা যাহরা যখন নামাযের জন্য দাড়াতেন তখন তার নুরে সব কিছু উদ্ভাসিত হয়ে যেত।

নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) অতুলনীয় ও মহিমান্বিত জীবনাদর্শ থেকে আমরা আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হওয়ার শিক্ষা নিতে পারি; এমন বান্দা যার অন্তর হবে হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত; যে বান্দা অন্য কোন মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না, যে বান্দা অন্য কারও গিবত করবে না। আমরা তার জীবনাদর্শ থেকে আদব ও শিষ্টাচারের শিক্ষা নিতে পারি; প্রভুর সম্মুখে কেমন শিষ্টাচার দেখাতে হবে, রাসূলের (সা.) সম্মুখে কেমন আদব হবে এবং আমিরুল মু'মিনিনের (আ.) সামনে কেমন শিষ্টাচার প্রকাশ করতে হবে; সে শিক্ষা আমরা এ মহীয়সী নারীর নিকট থেকে গ্রহণ করব।

রাসূলের (সা.) ওফাতের পর আমিরুল মু'মিনিন আলীর (আ.) অধিকার যখন কিছু বিপথগামী সাহাবী হরণ করেছিল, তখন তিনি দৃঢ়তার সাথে আলী (আ.) পাশে দাড়িয়ে ছিলেন। তিনি তাদের জুলুম ও অন্যায় আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আমরা তার থেকে শিক্ষা নিতে পারি যে, সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকব এবং কোন অন্যায় ও জুলুমের সাথে আপোষ করব না।

ট্যাগ্সসমূহ: নবী ، হযরত ، ফাতেমা ، যাহরা ، ইকনা
captcha