বার্তা সংস্থা ইকনা: মাস কয়েক আগে আসামের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা তথা অর্থমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্বশর্মা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আসামে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে আইন জরুরি। দুই সন্তান নীতি বাধ্যতামূলক করা যায় কিনা সে নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। পরে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, দুই সন্তান নীতি কার্যকর করা অসম্ভব। বিশেষ করে আসামের মতো রাজ্যে। কিন্তু বর্তমানে সরাসরি কোনও আইন ঘোষণা করা না হলেও আসাম সরকার বাঁকা পথে যেন একই কাজ করতে চলেছে।
এ ব্যাপারে আসাম জমিয়ত উলেমা হিন্দের নেতারা রবিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, আসামে বিজেপি সরকার মুসলিমদের টার্গেট করেছে। জমিয়ত নেতা তথা সাংসদ বদরুদ্দিন আজমল জানান, আসাম সরকার রাজ্যে দুই সন্তানের বেশি পরিবারগুলিকে সব ধরণের সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে। যাদের দুটির বেশি সন্তান রয়েছে, তারা সরকারি চাকরি করতে পারবেন না। তারা কোনও সরকারি প্রকল্পের সুযোগ লাভ করতে পারবেন না।
এমনকি, পঞ্চায়েত ও জেলা পর্যায়ের কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেও পারবেন না। সাংসদ বদরুদ্দিন আজমল জানান, আসাম সরকার এই নীতি কার্যকর করলে রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মুসলিমরা। কারণ পূর্বে অধিকাংশ মুসলিম পরিবারে দুইয়ের বেশি সন্তান রয়েছে।
সাংসদ বদরুদ্দিন আজমল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে যেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্রোগ নেওয়া উচিত ছিল, তা না করে এই নীতির মাধ্যমে মুসলিমদের টার্গেট করা হচ্ছে। আসাম সরকার যদি এই নীতি বলবৎ করে তা হলে জমিয়ত উলেমা হিন্দ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে বলে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আসামে তিন কোটির অধিক ভোটার রয়েছেন। এদের মদ্যে এক কোটির কাছাকাছি রয়েছেন মুসলিম। আর মুসলিমদের মধ্যে পঁচানব্বই শতাংশ লোকই বাংলাভাষী। এরা মূলত এখানে এসেছেন বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নোওয়াখালি ইত্যাদি এলাকা থেকে। তবে দীর্ঘ দশক ধরে এই বাংলাভাষী মুসলিমরা আসামের সমাজজীবনের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছেন। রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে এই লোকেদের অধিকাংশের সরকারি পরিচয় অসমিয়া। বাংলাভাষায় কথা বললেও ভোটার তালিকা কিংবা সরকারি নথিপত্রে তারা তাদের মাতৃভাষা অসমিয়া বলে লিখে থাকেন। আসামের বরাক উপত্যকার মুসলিমরা আজও তাদের মাতৃভাষা বাংলা বলেই লিখছেন। বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় তারা বাংলাভাষায় পড়াশুনার সুযোগ পান না। এরকম এক জটিল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে তারা জীবন নির্বাহ করছেন। অধিকাংশ লোকই নিরক্ষর হওয়ার ফলে আসামে মুসলিমদের জনসংখ্যা বাড়ছে। ইতিমধ্যে আসামের এগারোটি জেলায় মুসলিমরা সংখ্যাগুরুতে পরিণত হয়েছেন। এতে অসমিয়া, বাঙালি হিন্দু সহ বিভিন্ন উপজাতি লোকেরা শংকিত হয়ে পড়েছেন।
এছাড়াও আসামে অবৈধ বাংলাদেশি সমস্যা রয়েছে। তাই নতুন সরকার মুসলিম জনসংখ্যার বিস্ফোরণে লাগাম টানতে ও স্থানীয় লোকেদের সাংবিধানিক ক্ষমতা রক্ষা করতে জনসংখ্যা নিয়ে বিশেষ আইন প্রয়োগের কথা ভাবছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই শংকিত হয়ে পড়েছেন মুসলিমরা।
জমিয়ত নেতা তথা সাংসদ বদরুদ্দিন আজমল হচ্ছেন আসামের একমাত্র মুসলিম রাজনৈতিক দল এআইইউডিএফের প্রতিষ্ঠাতা। আসামের মুসলিম সমাজে তাঁর বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আসাম বিধানসভায় তাঁর দলের তেরোজন বিধায়ক রয়েছেন। যদি আসাম সরকার জনসংখ্যা নীতি কার্যকর করে তা হলে সবার আগে এর কোপে তাকে পড়তে হবে। কারণ সাংসদ বদরুদ্দিন আজমলেরও দুইয়ের বেশি সন্তান রয়েছে। আগামীতে তিনিও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সূত্র: amadershomoy