IQNA

ল্যাটিনো আমেরিকান মিরিয়ামের ইসলাম গ্রহণ ও খাপ খাওয়ানোর গল্প

20:55 - February 11, 2019
সংবাদ: 2607922
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পুয়ের্তো রিকো(পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত একটি স্বশাসিত দ্বীপ ও জনরাষ্ট্র। দ্বীপটি প্রশাসনিকভাবে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংযুক্ত) নামক দেশটির বংশোদ্ভূত যে সকল মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে তাদের মধ্যে মারগারিটা মিরিয়াম আবুওয়াদিহ হচ্ছেন এমন একজন যিনি তার দেশের মানুষদের মধ্যে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীদের একজন।

বার্তা সংস্থা ইকনা: মিরিয়াম তার ১৪ বছর বয়সে রোমান ক্যাথলিক ধর্ম বিশ্বাসে বাপ্টাইজড হন এবং পরবর্তীতে জেহোভা’স উইটনেস(Jehovah’s Witness) নামক ধর্ম বিশ্বাস লালন করে বেড়ে উঠেন।

কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর থেকে আসা একজন মুসলিম তরুণের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং এর কিছুদিন পরেই তার নিজের ঘরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

আর এখন চার সন্তানের এই জননী নিজ গৃহে, সন্তানদের মধ্যে এবং প্রতিদিনের জীবন ধারায় পুয়ের্তো রিকান, ফিলিস্তিনি এবং ইসলামী সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটিয়ে চলেছেন।

নিজের প্রথম মসজিদ সফর সম্পর্কে বলতে গিয়ে মিরিয়াম আবুওয়াদেহ বলেন, ‘আমি ইসলাম সম্পর্কে যত বেশী জানতে শুরু করি ঠিক তত বেশী আমি এই ধর্মের প্রতি টান অনুভব করতে থাকি, কারণ এখানে আমি অনেক বেশী নম্রতা খুঁজে পাই।’

শুধুমাত্র মিরিয়াম আবুওয়াদেহ নন বরং Journal of Race নামক একটি সংস্থার করা এক জরীপে উঠে আসে যে, যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে যে সকল ল্যাটিনো বা স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলা লোকজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে চলেছে তাদের বেশীর ভাগই সৃষ্টিকর্তার সাথে নিজেদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ অনুভব করেই এই ধর্ম গ্রহণ করছেন।

মিরিয়াম আবুওয়াদেহার ভাষায়- ‘ইসলাম আপনার সামনে সকল কিছুর উত্তর তুলে ধরে। আর আমার কাছে, অন্য কোনো ধর্ম এর মত মনে হয় না। যেমন ধরুন, কিভাবে বাথরুম ব্যবহার করতে হবে, কিভাবে আপনাকে পানি পান করতে হবে ইত্যাদি সহ সকল কিছুর উত্তর আপনি ইসলামে খুঁজে পাবেন।’

মিরিয়াম আবুওয়াদেহর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মাধ্যমে তিনি তার নিজের হিসপানিক মূল খুঁজে পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের মধ্য নাম হচ্ছে- আবদুল্লিয়াহ, যার মূলে রয়েছে একটি আরবি শব্দ। ইসলামী সাম্রাজ্য অন্তত ৬০০ বছরেরও অধিককাল স্পেন শাসন করেছে, আর আমার পূর্ব পুরুষ স্পেন থেকে পুয়ের্তো রিকোতে এসেছিলেন, সুতরাং আমি এ নিয়ে চিন্তা করি।’

ইসলাম এবং ল্যাটিনো সংস্কৃতির মধ্যে মিল খুঁজে পেয়ে মিরিয়াম আবুওয়াদেহ বলেন, ‘ল্যাটিনো সমাজ খুবই পরিবার কেন্দ্রিক যেখানে পরিবার গঠন হয় ইসলাম অনুসারে। আর গৃহ কেন্দ্রিক লোকজন এবং একই সাথে অতিথি পরায়ণও বটে।’

মিরিয়াম আবুওয়াদেহ বিগত ৩০ বছর যাবত Philadelphia community এর সক্রিয় সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি একই সাথে Youth Programs at Al Aqsa Mosque এর পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় বসবাসরত মুসলিমদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায় করার জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় স্প্যানিশ ভাষায় কলাম লিখে থাকেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার জাতি গোষ্ঠী সম্পর্কে লোকজনদের জানাতে চাই। আমি এটা চাই না যে লোকজন আমাদেরকে আরব বংশোদ্ভূত ভাবুক। এমনকি আমার সন্তানেরাও জানে কিভাবে পুয়ের্তো রিকান খাবার রান্না করতে হয়। আমি আমার সন্তানদের মধ্যে একই সাথে পুয়ের্তো রিকান এবং ফিলিস্তিনি সংস্কৃতির প্রতিফলন করতে পেরে গর্বিত।’

বর্তমানে তিনি New Sanctuary Movement নামের একটি সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় বসবাসরত মুসলিম অভিবাসীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট।

তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা নিশ্চিত করা যে, সকল অভিবাসী যাতে সমানভাবে আশ্রয় পায়।’

যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসরত মুসলিম শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য মিরিয়াম আবুওয়াদেহর ইতিবাচক বিশ্বাস এবং আশার কারণেই তিনি সামনে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি Interfaith Walk for Peace এর বার্ষিক সভায় কাজ করেছেন, যেখানে খ্রিষ্টান, ইহুদি এবং বৌদ্ধ ধর্মের লোকজন শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই বিশ্বে পরিবর্তন ঘটছে। কিন্তু নেতিবাচক দিকের সাথে আমাদেরকে প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করে যেতে হবে।’

তিনি তার কন্যা সন্তানের জন্য পুয়ের্তো রিকান পতাকা এবং ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যগত স্কার্ফ যা keffiyeh নামেও পরিচিত এর আদলে তৈরী করা বালিশ হাতে নিয়ে গর্ব করে বলেন, ‘আমি যে কাজ করি তা নিয়ে আমি খুশি। আমি মনে করি প্রথমত কমিউনিটির সদস্য হিসেবে এটি আমার দায়িত্ব আর দ্বিতীয়ত আমি একজন মুসলিম, তৃতীয়ত আমি একজন মা। আমি সবসময় আমার সন্তানদের বলি যে, তুমি শুধুমাত্র পেছনে ফিরে থাকতে পার না এবং কিছু না করা ছাড়াই হাল ছেড়ে দিতে পার না। এটি আমাদের যুদ্ধ এবং এখন আমাদের সময়।’ আলদিয়ানিউজ ডট কম।

captcha