এখন থেকে ১৪৩৩ চন্দ্র-বছর আগে বিদায় হজের কয়েক দিন পর মহানবী (সা) মহান আল্লাহর নির্দেশে আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ) নিজের খলিফা বা প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করেছিলেন। দিনটি ছিল ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ বা দশম হিজরির ১৮ জিলহজ।
বিদায় হজের পর রাসূল (সা.) মদিনায় ফেরার পথে গাদির-এ-খুম নামক স্থানে আল্লাহর নির্দেশে এক অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হজরত আলীকে (আ) মুমিনদের নেতা বা মাওলা হিসেবে মনোনীত করেন। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার ৮০ কিংবা ৮৪ দিন পর আল্লাহর রাসূল (সা.) আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। বিদায় হজ সমাপনের পর তিনি মদিনা অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন এহরাম পরা অবস্থায়। সঙ্গে ছিল সোয়া লাখ সাহাবি । পথে ১৮ জিলহজ মদিনার নিকটবর্তী গাদির-এ-খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলে পবিত্র কুরআনের শেষ আয়াতের আগের আয়াত তথা সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়।
সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন: "হে রসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ দেখান না।" আল্লাহর পক্ষ থেকে এই নির্দেশ নাজিলের পর, রাসূল (সা.) গাদির-এ-খুম নামক স্থানে আল্লাহর ওই ঘোষণাটি উম্মতকে জানিয়ে দেন অভিষেক উৎসবের আয়োজন করে। ‘যখন রাসূল (সা.) গাদির-এ-খুম নামক এলাকায় এসে থামলেন, তখন তিনি সবাইকে একত্রিত করলেন, হজরত আলীর (আ) হাত ধরে উপরে তুললেন এবং জনতার উদ্দেশে বললেন, ‘তোমরা কি জান, আমি মুমিনদের নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশি আওলা বা প্রিয়?’ লোকেরা বললেন, ‘হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)’। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ, আমি যাঁর মাওলা এই আলীও তাঁর মাওলা। হে আল্লাহ যে তাঁকে বন্ধু বানায় তুমিও তাঁকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর, আর যে তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করে তুমিও তাঁকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর।
ঈদুল্লাহুল আকবার অথবা ঈদে অলে মুহাম্মাদ (সা.) নামে খ্যাত ঈদে গাদির উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য জিয়ারতকারী নাজাফে ইমাম আলী (আ.)এর পবিত্র মাযারে উপস্থিত হয়েছেন।
ঈদে গাদির উপলক্ষে ইমাম আলী (আ.)এর পবিত্র মাজারের বিভিন্ন অংশ ফুল ও আলো দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ইমাম আলী (আ.)এর পবিত্র মাজার এবং নাজাফ আশরাফ প্রদেশের স্থানীয় সরকারও জিয়ারতকারীদের চলাচলের সুবিধার্থে তাদের সমস্ত শক্তি ও সুযোগ-সুবিধা একত্রিত করেছে এবং জিয়ারতকারীদের সেবা ও নিরাপত্তা প্রদান করছে।
এছাড়াও, ইরাকের অর্ধেকেরও বেশি প্রদেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ঈদে গাদির উপলক্ষে তাদের প্রাদেশিক সরকারি অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সে দেশের মোট ১৯টি প্রদেশের মধ্যে ১০টি প্রদেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ রোববার পৃথক বিবৃতি জারির মাধ্যমে ঘোষণা করেছে যে, ঈদে গাদির খুম উপলক্ষে আজ (সোমবার) তাদের প্রদেশের সরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
নাজাফ আশরাফ, কারবালা মা'আলি, বসরা, জ্বী কার, দিওয়ানিয়াহ, মায়সান, ওয়াসিত, দিয়ালা, বাবোল এবং মুছান্না প্রদেশগুলির সরকারী অফিসগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে।
4071702