IQNA

দারিদ্র্যের অস্তিত্ব কি আল্লাহর বিধানের বিরোধিতা করে?

20:28 - August 02, 2022
সংবাদ: 3472224
তেহরান (ইকনা): ইতিহাস জুড়ে এবং সমসাময়িক বিশ্বে অনেক সমাজ এবং মানুষ দারিদ্র্যের মুখোমুখি হয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই দারিদ্র্যতার পরিমাণ এতটাই অধিক হয়েছে যে, যার ফলে তারা ধ্বংস হয়েছে। এমন পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় মনে প্রশ্ন জাগে যে, আল্লাহর গুণাবলীকে ন্যায়পরায়ণতা ও রিযিক প্রদানের কথা বিবেচনা করলে এই শর্তগুলো কিভাবে ন্যায়সঙ্গত হতে পারে?
আল্লাহ যদি রিযিকদাতা ও রক্ষণাবেক্ষণকারী হন এবং আয়াত ও রেওয়ায়ত অনুযায়ী তিনি জীবজগতের রিযিকের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকেন, তাহলে পৃথিবীতে এত গরীব ও ক্ষুধার্ত মানুষ কিভাবে এল? এই প্রশ্নের উত্তরে একজন শিয়া পণ্ডিত আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজী উল্লেখ করেছেন, সৃষ্টিজগতের সমস্ত জীবন্ত জিনিসের নিশ্চয়তা আল্লাহ দিয়েছেন। কিন্তু "পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা" দ্বারা এটি "অর্জিত" করা "মানুষের" নিজেই দায়িত্ব এবং "শোষণ" এবং স্বার্থপরতা বলে কোনও বাধা থাকা উচিত নয়; কেউ যদি অলসতা ও অসতর্কতার মাধ্যমে রিযিকের ক্ষতি করে অথবা অহংকারীরা শোষণ করে মানুষকে দারিদ্র্যের মধ্যে রাখে, তাহলে তা মানুষের কর্মের সাথে সম্পর্কিত।
 
মানুষের ভরণপোষণের নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি, আল্লাহ তায়ালা দরিদ্রদের সমর্থন করার জন্য আহকাম ও আইন প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেগুলো যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে শুধুমাত্র ক্ষুধার জন্য লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে না, বরং পৃথিবী থেকে দরিদ্রতা চিরতরে দূর হবে।
 
মানুষের দারিদ্র্য ও ক্ষুধার অন্যতম কারণ হচ্ছে মজুতদারি, সম্পদ আহরণ ও অন্যের সম্পদ লুটপাট। মানবসমাজে যেসব অসুবিধা দেখা যায় তার মধ্যে অধিকাংশ কারণ হলো এক গোষ্ঠীর অন্য গোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন। এই নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়ন কেবলমাত্র অত্যাচারী সরকারের জন্য নয় এবং প্রতিটি সমাজের মানুষের মধ্যে কখনও কখনও কিছু মুনাফাখোরদের সম্পদ আহরণ ও মজুদদার ও সমাজে উচ্চমূল্য এবং খাদ্যের অভাব ঘটায়।
 
জীবিকা অর্জনের জন্য মানুষের প্রচেষ্টাও দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে রিজিক বণ্টন করেছেন, কিন্তু এর মানে এটা নয় যে মানুষ ঘরে বসে থাকবে এবং জীবিকা অর্জনের জন্য কোন চেষ্টা করবে না; তাই পবিত্র কুরআনের সূরা নাজমের ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: 
 
«وَأَن لَّیْسَ لِلاْنسَانِ إِلَّا مَا سَعَى
 
এবং মানুষের জন্য কেবল ততটুকুই রয়েছে যতটা সে প্রচেষ্টা করে। 
 
কিন্তু কেউ যদি জীবিকা অর্জনের জন্য চেষ্টা করে, তবে সে অবশ্যই তার প্রয়োজন অনুসারে যা তার জন্য নির্ধারিত রয়েছে তা অর্জন করবে।
 
এছাড়াও, আল্লাহ দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা দূর করার জন্য অনেক উপায় প্রদান করেছেন, যা দুর্বল এবং দরিদ্রদের আর্থিক সঞ্চালন এবং মনোযোগের কারণ হয়। খুমস এবং যাকাত এর মত বিষয়গুলো ইসলামী শরিয়তের মধ্যে রয়েছে। পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে: 
 
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاکِینِ وَالْعَامِلِینَ عَلَیْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِی الرِّقَابِ وَالْغَارِمِینَ وَفِی سَبِیلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِیلِ  فَرِیضَةً مِّنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِیمٌ حَکِیمٌ
 
সাদাকাসমূহ (যাকাতসমূহ) কেবল অভাবগ্রস্ত (ফকির), মিসকিন (নিঃস্ব), এ সংক্রান্ত (যাকাত আদায়কারী) কর্মচারী এবং যাদের হৃদয়ে প্রীতি সঞ্চার করতে হয় এবং দাসদের মুক্তি ও ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের জন্য, আল্লাহর পথে এবং অসহায় মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত ফরয এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
সূরা তওবা, আয়াত: ৬০।

 

captcha